জেনে নিন রক্তশূণ্যতার কারণ, লক্ষণসমূহ ও চিকিৎসা
শুরু করুনরক্তশূণ্যতা কি?
বয়স ও লিঙ্গভেদে স্বাভাবিকের তুলনায় রক্তে লোহিত রক্তকণিকা অথবা হিমোগ্লোবিন অথবা উভয়টিই কমে গেলে তাকেই বলা হয় রক্তশূণ্যতা বা রক্তস্বল্পতা।রক্তশূণ্যতার লক্ষণসমূহ
একেবারেই সরল থকে শুরু করে অত্যন্ত জটিল ও জীবনসংহারী লক্ষণও রয়েছে রক্তশূণ্যতার। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ- সহজেই হাঁপিয়ে ওঠা
- প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করা, এমনকি পর্যাপ্ত ঘুমের পরও মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরানো
- নখ, ঠোঁট, জিহ্বা ও দেহের চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
- হাত, পা নিঃসাড় ও ঠাণ্ডা হয়ে আসা
- দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া
- মেজাজের আকস্মিক ও ঘনঘন পরিবর্তন
- স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া
হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব
রক্তশূণ্যতার কারণে রক্তের অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে কোষের চাহিদা মেটাতে হৃৎপিন্ড বাধ্য হয় বেশি বেশি রক্ত পাম্প করতে। তখন এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারেঃ- হৃদযন্ত্রের ছন্দপতন (অর্থাৎ, আপনার হৃৎপিন্ড স্বাভাবিক অবস্থায় যে ছন্দে স্পন্দিত হতো, সেই ছন্দ ব্যাহত হবে)
- সহজেই দম ফুরিয়ে যাওয়া
- বুক ধড়ফড় করা
- বুক ব্যথা
ঝুঁকিতে কারা?
- পুরুষের তুলনায় নারীতে রক্তশূণ্যতার ঝুঁকি বেশি। পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ অনেক সময় রক্তশূণ্যতার জন্ম দেয়। গর্ভাবস্থায়ও মহিলারা রক্তশূণ্যতার বাড়তি ঝুঁকিতে থাকেন।
- দীর্ঘদিন যাবৎ যারা কোন রোগে ভুগছেন, যেমন কিডনি রোগ; তাদেরও রক্তশূণ্যতার ঝুঁকি বেশি।
- যাদের খাদ্যতালিকায় নিয়মিতভাবে আয়রন, ভিটামিন সি ও ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার কম থাকে তারাও বাড়তি ঝুঁকিতে থাকেন।
- কোন কোন ধরণের রক্তশূণ্যতা আবার বংশগত।
রক্তশূণ্যতার কারণ
আয়রন ঘাটতি
আমাদের দেশে রক্তশূণ্যতার প্রধানতম কারণ হলো আয়রন ঘাটতি। খাদ্যতালিকায় আয়রণসমৃদ্ধ খাবারের অভাবই মূলত এ জন্য দায়ী। তাছাড়াও অন্ত্রের বিভিন্ন রোগের কারণে অনেক সময় আয়রণ খেলেও তা ঠিকভাবে শোষিত হয় না। কৃমির সংক্রমণও অন্ত্রে আয়রন শোষিত হতে দেয় না। তাছাড়াও কিছু কিছু খাবার ও ওষুধ আছে যারা আয়রনের শোষনকে বাঁধাগ্রস্ত করেঃ- চা
- কফি
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
- ক্যালসিয়াম
- এন্টাসিড
রক্তশূণ্যতার কারণ
ভিটামিনের অভাব
ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক এসিড পাকস্থলী ও অন্ত্র থেকে আয়রণ শোষনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাবারে এদের পরিমাণমতো উপস্থিতির অভাব তাই রক্তশূণ্যতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায় প্রাণীজ উৎস থেকে আর সবুজ শাকসবজিতে থাকে ফলিক এসিড।রক্তশূণ্যতার কারণ
দীর্ঘকালীন অসুস্থতা
দীর্ঘদিন ধরে কোন সংক্রামক বা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত থাকলে শরীরের লোহিত রক্তকণিকা এবং হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন ব্যাহত হয়। আবার কিছু কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে রক্তশূণ্যতা দেখা দেয়। তাই আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিন ওষূধের সাথে সাথে বাড়তি আয়রণও খেতে হবে কিনা।রক্তশূণ্যতার কারণ
বিবিধ
- অস্থিমজ্জার রোগঃ লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হয় অস্থিমজ্জা থেকে। যদি কোন কারণে অস্থিমজ্জা তা তৈরির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন তাকে Aplastic anemia বলা হয়।
- বংশগতিঃ থ্যালাসেমিয়া, Sickle Cell anemia এগুলো বংশগতভাবে হয়ে থাকে।
- রক্তপাতঃ প্রচুর রক্তপাত থেকে রক্তশূণ্যতা দেখা দিতে পারে। যে কোন ধরণের দূর্ঘটনা, বড় কোন অপারেশন, মাসিকের সময় অস্বাভাবিক রক্তপাত রক্তশূণ্যতার উল্লেখযোগ্য কারণ।
রক্তশূণ্যতা নির্ণয়
রক্ত পরীক্ষাঃ
- CBC (Complete Blood Count): এ পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে বিভিন্ন রক্ত কণিকার সংখ্যা ঠিক আছে কিনা তা দেখা হয়।
- হিমোগ্লোবিনের গুণগত ও পরিমাণগত বিশ্লেষণ।
- আয়রন প্রোফাইলঃ রক্তে আয়রণের মোট পরিমাণ, রক্তের আয়রণ ধারণক্ষমতা, আয়রণ বহণকারী বিভিন্ন প্রোটিনের পরিমাণ দেখা হয় এ পরীক্ষার মাধ্যমে।
অস্থিমজ্জা পরীক্ষাঃ
- বিশেষ ধরণের সিরিঞ্জ ও সুঁই ব্যবহার করতে অস্থিমজ্জা সংগ্রহ করে বিভিন্ন রক্ত কণিকার উৎপাদন ঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা দেখা হয়।